যে দেশে পিরিয়ডকালীন সচেতনাই ভালমত বৃদ্ধি পায়নি সেখানে স্তন ক্যান্সার নিয়ে ভাবনা… আ মরণ! যে দেশে শুধু পুরুষের মনবাঞ্ছনা পূরণের জন্য নারীর স্তন্যকে সুডৌল / সূক্ষ্ম / তীক্ষ্ণ / টন টন রাখার জন্য উপদেশ ভন ভন করে সে দেশে নারীর স্তন্যের নানাবিধ সমস্যা নিয়ে ভাবার সময় কোথায় পুরুষের কিংবা নারীর? এদেশে তো এখনো পিরিয়ডকালীন সচেতনতাই বৃদ্ধি পায়নি তেমন!

ছবি সংগৃহীত: স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ ও উপসর্গ  

১.সেই ছোট বেলাতেই একটা মেয়ের বুকের বিন্দু যখন একটু একটু করে বড় হতে থাকে তখন-ই সেই বড় মাংসের দলাকে টাইনা টুইনা আঁটসাঁট করতে আর সুডৌল / তীক্ষ্ণ করতে আর ঝুলঝুল করা থেকে রক্ষা করতে ব্রা পড়ানো হয়! না পরে উপায় নেই! অথচ এই আঁটসাঁট বন্ধনীর ব্যাবহার কিংবা এ থেকে যে নানাবিধ রোগ হতে পারে সেই সচেতনতা নেই!

২.গ্রামে সাধারণত মেয়েদের টাইট শেমিজ পড়ানো হয় কিংবা টাইট জামা যাতে স্তন বেশি বোঝা না যায়, আর শহুরে মেয়েরা পড়ে ব্রা… ! গ্রাম কিংবা শহরের ৯০% মেয়েরা জানে না, বক্ষবন্ধনীর ঠিকমত ব্যাবহার, জানে না এর কি কি ক্ষতিকারক দিক আছে!! আর ওই যে স্তন্য টানটান আর তীক্ষ্ণ চোক্কা করতে হবে এই প্রয়াস চালায় অনেকে! দেশ বিদেশে বহু উচ্চাভিলাষী / অভিনেত্রী/ পর্ণ স্টাররা এই স্তন্যকে আরো চোক্কা আর বড় করতে ব্যবহার করে বিভিন্ন ক্রিম/ করে সার্জারী/ করে ম্যাসেজ! এদের কাউকে কাউকে দেখা যায় শরীরের তুলনায় বেঢপ আকৃতির স্তন! পুরুষ ও মজে যায় তাতে!! ফলশ্রুতিতে অনেক মেয়েই স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে, শুধুমাত্র পুরুষের মনোরঞ্জনের জন্য স্তন্যকে বেঢপ আকৃতি আর চোক্কা করতে গিয়ে!

৩.এসব ছাড়াও বক্ষবন্ধনীর সঠিক ব্যাবহার না জানা থাকাতেও বর্তমানে মেয়েরা ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে!

৪.আবার ডিওডারেন্ট থেকে যে স্তন ক্যান্সার হতে পারে সেই ব্যাখ্যাও গবেষকরা এর মধ্যে দিয়ে ফেলেছেন… তাই সময় এসেছে সচেতনতার… সময় এসেছে পুরুষের মনোরঞ্জনের জন্য স্তনকে সুডৌল আর চোক্কা করা থেকে বিরত থাকার, সময় এসেছে রোগে আক্রান্ত হবার আগে, সেই রোগ সম্পর্কে সচেতন হয়ে নিজেকে রক্ষা করার!

৫.প্রত্যেক মেয়ের এখন উচিৎ – ব্রা’র ঠিকমত ব্যাবহার জানা, এর ক্ষতিকারক দিক নিয়ে জানা এবং ডিওডারেন্ট এর ব্যাপারে সতর্ক হওয়া! সারাদিন ব্রা পড়ে থাকা কিংবা রাতের বেলা ব্রা পড়ে থাকা অত্যন্ত ক্ষতিকর আবার অনেকে এসব অন্তর্বাস ( ব্রা/ প্যান্টি) প্রতিদিন ধোয় না ! এটা থেকেও অনেক রোগ হয়! আবার এইসব অন্তর্বাস কোন কাপড়ের সাথে মিলিয়ে ধুলেও বিভিন্ন রোগ ছড়ায়!

আবার অতিরিক্ত ডিও ব্যাবহারেও ক্যান্সার হতে পারে!

১. অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করেন ব্রা ব্যবহারের ফলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি একটু বেশিই বাড়ে…. ব্রা ব্যবহার বন্ধ করতে পারলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিটা কমে আসবে। এই ব্যাপারটিকে আরও জোরদার করতে প্রতিবছর নো ব্রা দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। প্রথম দিকে ৯ জুলাই পালন করা হতো দিনটি। তবে এখন ১৩ অক্টোবর ‘আন্তর্জাতিক নো ব্রা দিবস‘ হিসেবে পালন করা হচ্ছে। তবে শুধু মাত্র নারীর স্বাধীনতা নয়, বলা হচ্ছে স্তন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করতেই মূলত এই নো ব্রা দিবস পালন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।নিয়মিত ব্রা পরার সঙ্গে স্তন ক্যানসারের সম্পর্ক নিয়ে অনেক গবেষণাই হয়েছে। তবে, নৃ-বিজ্ঞানী সিডনি সিঙ্গার ও সোমা গ্রিসমাইজারের করা একটা গবেষণার কথা এখানে খুবই প্রাসঙ্গিক। ‘ড্রেসড টু কিল: দ্য লিঙ্ক বিটউইন ব্রেস্ট ক্যানসার অ্যান্ড ব্রাস’ শিরোনামে একটা বইও প্রকাশ করেছেন এ দুই গবেষক। চার হাজার নারীর ওপর পরিচালিত ওই গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কখনোই ব্রা পরেন না, এমন নারীদের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি নিয়মিত ব্রা পরেন এমন নারীদের তুলনায় অনেক কম।

২.সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট ব্যবহারের সঙ্গে স্তন ক্যানসারের যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া গেছে। আর এটা থেকে ক্যানসারের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায় শেভ করার পরপরই এমন ডিওডেরান্ট ব্যবহার করলে। এ ছাড়া আগে এমন একটা ধারণা ছিল যে, ডিওডেরান্ট ব্যবহার অ্যান্টিপার্সপিরেন্টের চেয়ে তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় ‘প্যারাবেনস’-এর সঙ্গে স্তন ক্যানসারের যোগসূত্র পাওয়া গেছে। প্রসাধনী সামগ্রীগুলোর স্থায়িত্ব বাড়াতে প্রিজারভেটিভ হিসেবে এই রাসায়নিকের বিপুল ব্যবহার রয়েছে। প্রায় সব ডিওডেরান্টেই প্যারাবেনসের পরিমাণ অনেক। বিষয়টা সাধারণ একটা উদাহরণ থেকেই বোঝা যেতে পারে। স্তন ক্যানসার থেকে মারা গেছেন এমন এক নারীর স্তনের টিস্যুতে বিপুল পরিমাণ প্যারাবেনসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে অটোপসি বা ময়নাতদন্ত থেকে।

আসলে ক্যানসার প্রতিরোধের লড়াইয়ে জেতার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো ক্যানসারের কারণগুলো সম্পর্কে ভালো করে জানা। শুধু নিজে জানলেই হবে না। বিষয়গুলো জানাতে হবে চারপাশের মানুষজনকেও। আপনি নারী বা পুরুষ যা-ই হোন না কেন, আপনার কাছের মানুষদের সঙ্গে এসব বিষয়ে কথা বলুন। তাহলেই সামাজিক পরিসরে সচেতনতা বাড়বে। সবাই মিলে ক্যানসার প্রতিরোধের লড়াইটাও সহজ হবে।

আসুন ব্রেস্ট বা স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে নিজেদের অবস্থান থেকে সচেতন হই,স্তন ক্যান্সার রোধ করি সুস্থ-সবল জীবন গড়ি।